শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন
বাংলা নিউজডে আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঝড় একদিন থেমে যাবে। মানব সভ্যতা এখন এক বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলা করছে। সম্ভবত আমাদের এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় সংকট। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং জনগণ আগামী কয়েক সপ্তাহে যে সিদ্ধান্তগুলো নেবে তা আমাদের ভবিষ্যত পৃথিবীর গতিপথ, চরিত্র বদলে দেবে। এই বদলে যাওয়াটা যে শুধু আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা পদ্ধতিতে হবে, ব্যাপারটা তেমন নয়। বদলে যাবে আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সংস্কৃতির গতিপথ।
কেমন হতে পারে করোনা পরবর্তী পৃথিবী? কী কী পরিবর্তন আসতে পারে ‘বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব’ দিয়ে সেটা বুঝিয়েছেন একদল গবেষক। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস ভূমিকম্পের মতো আফটার শক দিয়ে বিশ্বকে স্থায়ীভাবে পুনর্নির্মাণ করবে। এক্ষেত্রে নয়টি বড় পরিবর্তনের কথা বলেছেন তারা।
১. দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে
নানা ধরনের স্বল্পমেয়াদী জরুরি অবস্থা তখন আমাদের জীবনে হয়ে যাবে ডাল-ভাতের মতো। খুব বড়সড় বিপর্যয় বা জরুরি অবস্থার চরিত্রই এরকম। ঐতিহাসিক সমস্ত প্রক্রিয়াকে খুব দ্রুত ঘটিয়ে ফেলে। সাধারণ সময়ে আমাদের যে সিদ্ধান্ত নিতে এবং বাস্তবায়নে লেগে যেত বছরের পর বছর, বড়সড় বিপর্যয়ে তা হয় অসম্ভব দ্রুত।
২. পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়বে
একটা দেশ তখন কিন্তু বেশ বড় মাপে একটা সামাজিক নিরীক্ষার জায়গা হয়ে যায়। যেমন সবাই বাড়িতে থেকে কাজ করলে এবং দূরত্ব মেনে যোগাযোগ বজায় রাখলে কী হয়? সমস্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে চলে গেলে কি ঘটনা ঘটবে? স্বাভাবিক সময় কোন দেশের সরকারই এ ধরনের কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রাজি হতো না।
৩. অভ্যাস থেকে যাবে
এক ক্রান্তিকাল পার করছি আমরা। করোনার সংক্রমণ এড়াতে আমরা বর্তমানে হোম কোয়েরেন্টিন পালন করছি, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছি। করোনা ঝড় থামলেও এই অভ্যানস থেকে যাবে। প্রযুক্তিভিত্তিক যোগাযোগ বেড়ে যাবে। তবে দরিদ্র এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলি বিশেষত অপ্রস্তুত এবং দুর্বল থাকবে।
সরকার ও কর্পোরেট ব্যবস্থা বড় ধাক্কা খাবে। অনেক বড় বড় সংস্থাগুলি ধসে পড়বে। বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে বিমান শিল্প,অফিস ভবন, শপিংমল, এয়ারলাইনস এবং বিমানবন্দরগুলি প্রচুর ঝুঁকিতে পড়বে। অর্থনৈতিক পতনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অনেক দেশের সরকার পড়ে যেতে পারে।
ইকুয়েডর থেকে ইরান পর্যন্ত পেট্রো-রাজ্যগুলোতে রাষ্ট্র ব্যবস্থার পতন কোনও অবাস্তব দৃশ্য নয়। তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় ভেনিজুয়েলার সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অতি মুদ্রাস্ফিতি এবং অনাহারে আরও বেড়ে যাবে। এছাড়া তেলের দাম পড়ে যাওয়া ও হজ বাতিলের ফলে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। দেশটির বৃহত্তম আয়ের উৎস এই দুটি খাত। ভাইরাসের সংক্রমণ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় এমনিতেই ইরানের অবস্থা খারাপ। করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক দুরাবস্থা ইরানের সরকারকে ফেলে দেবে এমন সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ায় ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলো থেকে নিশ্চিত জীবনের আশায় লোকেরা ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশে পাড়ি জমাতে মরিয়া চেষ্টা করবে। আন্তর্জাতিক বাঁধা-নিষেধ উপেক্ষা করে তারা শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করবে। এরই মধ্যে তুরস্ক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তারা চিরকালীনভাবে ৪ কোটি সিরিয়ান শরণার্থীর চাপ সহ্য করতে পারবে না। প্রয়োজনে তারা ইউরোপীয় সীমান্ত খুলে দেবে। মিশর, সুদানের, মেক্সিকোর মতো দেশগুলো থেকে লোকেরা দলে দলে ইউরোপে ঢুকবে। ফলে অভিবাসী সংকট বাড়বে।
অনেক দেশ অভিবাসীদের ঢল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটবে। খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ, শস্য রফতানি ইত্যাদি কারণে জাতীয়তাবাদ মাথা চাড়া দেবে। অভিবাসীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে স্থানীয়রা। ইউরোপের অসংখ্য দেশে রক্তক্ষয়ী সংঘাতও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব কমাতে এবং আরও স্থিতিশীল ও টেকসই দিকনির্দেশে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আজ কোন বড় বিনিয়োগের কথা চিন্তা করতে পারি না। বর্তমানে জৈব প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে বৃহত্তম বিনিয়োগ শুরু করার সুস্পষ্ট জায়গা। তবে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে প্রযুক্তিগত দিকে বড় বিনিয়োগ কমে যাবে।
করোনাভাইরাস মানব সভ্যতার জন্য ১/১১ এর চেয়েও বড় পরীক্ষা এবং একই সঙ্গে আর্থিক সংকট হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। এটি একটি বিস্ময়কর ধাক্কা যা বিশ্বব্যবস্থাকে ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে। জৈবিক ও সভ্যতা উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক বিবর্তন আসবে। সরকারী- বেসরকারী খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং স্বল্পমেয়াদি ত্যাগের লক্ষ্যে যোগাযোগ অর্জনের মতো দীর্ঘমেয়াদী অগ্রাধিকারগুলি থমকে যাবে। অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকটের কারণে যুদ্ধ-বিগ্রহ বেড়ে যাবে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধি পাবে।সূত্র বাংলা নিউজপ্র।
আমেরিকা, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সর্বশেষ খবরের জন্য বাংলা নিউজডের ওয়েবসাইটে আসুন এবং আমাদের Bangla Newsday ফেসবুক পৃষ্ঠাটি সাবস্ক্রাইব করুন।